রাজধানীর পুরান ঢাকার মুদি দোকানদারের দুই ছেলে মিজানুর রহমান চাকলাদার ওরফে দিপু চাকলাদার(৪৯) ও হাবিবুর রহমান ওরফে অপু চাকলাদার(৫৪) সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাকি দিয়ে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে রমনা থানা ও চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনে(দুদক) মানিলন্ডারিং এর অন্তত ২৫ টি মামলা রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে এসব মামলা হলেও টাকার জোরে তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। এসব শুল্ক ফাঁকি দিয়ে তারা দুই ভাই বোনে গেছেন কয়েকশো কোটি টাকার মালিক।এসব অবৈধ অর্থ দিয়ে তারা তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ,ঢাকার কেরানীগঞ্জ,সদর ঘাট, ইসলামপুর এবং পুরান ঢাকার ওয়ারীর অভিজাত এলাকায় গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি,গাড়ী,প্লট,ফ্ল্যাট ও মার্কেট।
তাদের দুই ভাইয়ের সাথে এই ২৫ মামলার অন্য আসামীরা আসামীরা হলেন– মোঃ মফিজুল ইসলাম লিটন, আব্দুল হান্নান দেওয়ান, নাঈম মৃধা,শফিকুল ইসলাম,মোঃ মনিরুজ্জামান,সাকিব হাসান তুহিন ওরফে রাকিব, জহুরুল ইসলাম ওরফে মুকুল,আব্দুল গোফরান, মোঃ সেলিম,মো রাশেদ খান, রুহুল আমিন, আরিফুর রহমান,তোফায়েল আহমেদ, মো নিজাম উদ্দিন মামুন,আরিফুল ইসলাম, মো রাশেদুল হাসান খান,মো জাহিদুল ইসলাম,মো জসিম উদ্দিন, আব্দুল হালিম জমাদ্দার,মো এরশাদ, মো আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, মোঃ সাদ্দাম হোসেন,মো মহিউদ্দিন,মো ফারুক আহমেদ, মোঃ কামরুল ইসলাম ভূঁইয়া, মোঃ ইমাম হোসেন, মোঃ সাদ্দাম হোসেন, মোঃ ইকবাল হোসেন, মোঃ সালাউদ্দিন টিটো, মাহবুবুর রহমান, সোহরাব হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মাসুম ও মোঃ সুলতান আহম্মেদ।
কিভাবে হাবিবুর রহমান অপু ও মিজানুর রহমান দিপু অবৈধ উপায়ে কয়েকশো কোটি টাকার মালিক হলেন- ২০১৭-২০১৮ সালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সাবেক দুই কর্মকর্তার ইউজার আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৬৬১ বার ‘অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে’ লগ ইন করে অবৈধভাবে মালামাল খালাস করা হয়েছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের তদন্তে উঠে আসে।
শুল্ক ফাঁকি ও চোরাকারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মিজানুর রহমান চাকলাদার ও হাবিবুর রহমান চাকলাদারকে আসামি করে ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ঢাকার রমনা থানায় একটি মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। পরে তাদের দুই ভাই ছাড়াও কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় আরও ২২ টি কয়েকটি মামলা করা হয়।
২০১৮ সালের জুনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কয়েকটি কনটেইনারে পণ্য আমদানি করে ঢাকার জারা এন্টারপ্রাইজ। সন্দেহজনক পণ্য হওয়ায় সেগুলো খালাস না করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজকে নির্দেশ দেয় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
চার মাস পর কায়িক পরীক্ষা করতে গিয়ে শুল্ক গোয়েন্দারা দেখেন, চালানটি খালাস হয়ে গেছে। মুহিবুল ইসলাম নামে চট্টগ্রাম কাস্টমসের এক কর্মকর্তার আইডি ব্যবহার করে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে চালানটি খালাস করা হয়। যদিও এ কর্মকর্তা ঘটনার তিন বছর আগেই অবসরে গেছেন।
শুধু এম আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও মেসার্স চাকলাদার সার্ভিস ছাড়াও গত দুই বছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সাবেক দুই কর্মকর্তার ইউজার আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৭৭৭টি চালান অবৈধভাবে খালাস করা হয়েছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের তদন্তে উঠে এসেছে।
এতে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তারা। সরকারি রাজস্ব সুরক্ষা ও কাস্টমসের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে এ অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছেন তারা।
মামলার পরপরই কাকরাইল থেকে এমআর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান চাকলাদারকে আটক করে পুলিশে দিয়েছিল সংস্থাটি।
অন্যদিকে,১০৫ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৭০ টাকা আত্মসাৎ ও সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য খালাসের অভিযোগে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়,২০১৮ সালের বিভিন্ন সময়ে জালিয়াতি ও ১০৫ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৭০ টাকা শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। দুদকের তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত।
দায়ের করা মামলার একটিতে সরকারের ৫৬ কোটি ৬৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এতে মেসার্স জারার এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহবুবুর রহমান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স চাকলাদার সার্ভিসের মো. হাবিবুর রহমান অপু, গ্রাহক মো. আব্দুল গোফরান,হামীম গ্রুপের কম্পিউটার অপারেটর মো. জহুরুল ইসলাম, গ্রাহক আবুল কালাম, কাস্টম হাউজের প্রাক্তন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার জনি, প্রাক্তন রাজস্ব কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম, রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উচ্চমান সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়,আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে ৫টি চালানে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি করে তা খালাসপূর্বক সরকারের ৫৬ কোটি ৬৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৫ টাকা আত্মসাৎ করেন।
আরেক মামলায় পোশাক কারখানার বাটন ও সেফটিপিন ঘোষণা দিয়ে সিগারেট আমদানি করে ৩২ কোটি ২৭ লাখ এক হাজার ৬৪৫ টাকা রাজস্ব আত্মসাৎ করা হয়। এই মামলায় আমদানিকারক মো. সালাউদ্দিন টিটো, সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্ট মেসার্স চাকলাদার সার্ভিসের মালিক হাবিবুর রহমান চাকলাদার, আবুল কামাল, সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহমদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আবদুল আল মাছুম ও অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামকে আসামি করা হয়।
অপরদিকে,১৬ কোটি ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরও একটি মামলা করা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে মিজানুর রহমান চাকলাদার, মফিজুল ইসলাম লিটন, মুভিং ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আব্দুল হান্নান দেওয়ান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স চাকলাদার সার্ভিসের মো. হাবিবুর রহমান অপু, আব্দুল গোফরান, হামীম গ্রুপের কম্পিউটার অপারেটর জহুল ইসলাম, কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উচ্চমান সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামকে।
এই মামলার এজাহারে বলা হয়, দুটি পণ্য চালানে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি করে তা খালাসপূর্বক সরকারের ১৬ কোটি ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন আসামিরা।
মেসার্স চাকলাদার সার্ভিসের দুই ভাই মিজানুর রহমান চাকলাদার ও হাবিবুর রহমান চাকলাদারের ব্যাংক হিসাব জব্দ: শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সফটওয়্যারে অনুপ্রবেশ করে পণ্য খালাসের অভিযোগে মিজানুর রহমান দিপু ও হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার নামে দুই ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম রফিকুল ইসলাম বিএফআইইউকে একটি চিঠির মাধ্যমে মিজানুর ও হাবিবুরের ব্যাংক হিসাব স্থগিত রাখার সুপারিশ করেন।
চিঠিতে বলা হয়,আমদানী কাজে ব্যবহৃত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সফটওয়্যার ‘অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড’-এ অবৈধ অনুপ্রবেশের মাধ্যমে লক করা সন্দিগ্ধ পণ্য-কন্টেইনার আনলক করে খালাস করে আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ একটি দল।
এর মধ্য দিয়ে তারা বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। ফলে মিজানুর, হাবিবুর ও তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত রাখা প্রয়োজন।মিজানুর রহমান ও হাবিবুর রহমান দুই ভাই। তাদের ঠিকানায় যথাক্রমে ৪/এ হেয়ার স্ট্রিট ওয়ারী,ঢাকা ও মুন্সিগুঞ্জের লৌহজং থানার ডহুরী এলাকার কথা উল্লেখ করেন।
ঢাকার রমনা থানায় মেসার্স চাকলাদার সার্ভিসের দুই সহোদর ভাই মিজানুর রহমান দিপু চাকলাদার ও হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদারের বিরুদ্ধে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের তৎকালীন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফ হোসেন নিতাই চন্দ্র মন্ডল ও আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি ও বিদেশে অর্থ পাচারের অন্তত ২২টি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার কে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং তার ভাই মিজানুর রহমান চাকলাদারকে কাকরাইলের এম আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এইসব মামলায় তারা দীর্ঘদিন কারা ভোগের পর জামিনে বেরিয়ে আবারো সেই একই কাজ শুরু করেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলায় মানি লন্ডারিং এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
চোরাকারবারী থেকে যে ভাবে উত্থান মুদি ব্যবসায়ীর দুই ছেলে মিজানুর রহমান দিপু চাকলাদার ও হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার- পুরান ঢাকার ঠাটারী বাজারে বাবা মৃত ফজলুর রহমান চাকলাদারের ছিল একটি মুদি দোকান। সেই দোকানে বাবার সাথে বসত মিজানুর রহমান দিপু চাকলাদার ও হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার। সেখান থেকে তারা ইসলামপুরে গিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া অবৈধ বন্ডের কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে। এর পাশাপাশি অবৈধ মদ ও সিগারেট বিক্রি ও শুরু করেন তারা দুই ভাই।এরপর আস্তে আস্তে সি এন্ড এ ব্যবসার সাথে জড়িত হয় তারা।পরে তারা দুই ভাই মেসার্স চাকলাদার সার্ভিস ও এম আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে দুটি প্রতিষ্ঠান খুলে অবৈধ সি এন্ড এফ এর আড়ালে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন অবৈধ পণ্য আমদানি শুরু করে।সরকারকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ উপায়ে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান বড় ভাই মিজানুর রহমান দিপু চাকলাদার ও ও ছোট ভাই হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার। বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও দীর্ঘদিন জেল খেটে বেরিয়ে আবারো এসব অবৈধ সিন্ডিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকি এবং দুদকের বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। বর্তমানে এসব মামলা চলমান থাকলেও তাদের অবৈধ টাকার জোরে সেসব মামলা এখন ফাইলের নিচে পড়ে আছে। এছাড়া গত ৫ আগস্টের পর ছোট ভাই আওয়ামী লীগের নেতা মিজানুর রহমান অপু চাকলাদার সুত্রাপুর ধোলাইখাল নারিন্দা এলাকায় ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। বর্তমানে মিজানুর রহমান অপু চাকলাদার পলাতক থাকলেও বড় ভাই হাবিবুর রহমান দিপু চাকলাদার লৌহজং থানা বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়ায় এখন সে তার সিন্ডিকেট পরিচালনা শুরু করেছে।
অভিযোগ রয়েছে,শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক (গার্মেন্ট) ও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজিং কারখানার নামে শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধায় আমদানি করা পণ্য চোরাই পথে বিক্রি করে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বিএনপি নেতা অপু চাকলাদার ও তার ভাই আওয়ামী মাফিয়া খ্যাত দীপু চাকলাদার। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সমন্বয়ে বিভিন্ন ধরনের কাপড় ও কাগজ খোলাবাজারে ছেড়ে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে দিপু-অপু।৫ আগষ্টের পর দীপু চাকলাদার পলাতক। সাম্রাজ্য রক্ষায় বিএনপি’র রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করছেন অপু চাকলাদার।আওয়ামী লীগের আমলে মিজানুর রহমান দিপু চাকলাদার তার সম্রাজ্য রক্ষা করতেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সাথে সখ্যতা গড়ে। এছাড়া আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাকর্মীদের সাথেও তার সখ্যতা ছিল।৫ আগস্টের পর আত্ম গোপনে চলে যায় আওয়ামী লীগের নেতা মিজানুর রহমান দিপু চাকলাদার। এরপর তার বড় ভাই হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার সাবেক যুবদল নেতা হামিদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যুবদল নেতা হামিদ আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসে।বর্তমানে হামিদের সেল্টারে এই এলাকায় আবারো অপরাধ সাম্রাজ্য পরিচালনা শুরু করেছে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার।
জানা গেছে,চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কয়েকটি স্থলবন্দর থেকে ইসলামপুর ও নয়াবাজার পর্যন্ত গড়ে ওঠা এই চোরাই পণ্যের কারবারিদের সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লৌহজং থানা বিএনপির সদস্য সচিব অপু চাকলাদার। রাজস্ব বিভাগের বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক গোয়েন্দাদের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই তথ্য।
অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া চাহিদা তৈরি করে বন্ড সুবিধায় কাপড় ও কাগজ এনে চোরাকারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে।
সূত্রমতে,২০১৭ সালের ২০ আগষ্ট পুরান ঢাকার গুলশান আরা সিটি মার্কেটের সামনে কাভার্ড ভ্যান থেকে বিপুল পরিমাণ চোরাই পণ্য উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মাসটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সৈয়দ আবিদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও খন্দকার সুরাত আলীর বিরুদ্ধে মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। মামলাটির তদন্ত করে সিআইডি। তদন্তে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার বেশি শুল্ক ফাঁকির তথ্য মেলে।
এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের মাসুদ প্যাকেজিং, মেসার্স ইসলাম অ্যাসোসিয়েটসসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভুয়া নথি তৈরি করে ডুপ্লেক্স বোর্ড কাগজ আমদানি করে চোরাকারবারির অভিযোগে মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। আদমজী ইপিজেডকেন্দ্রিক মেসার্স আঙ্কেল প্যাকেজিং লিমিটেড নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে মামলা করা হয়। এসব মামলায় ব্যাংকের সঙ্গে আঁতাত করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সঙ্গে নিয়ে ভুয়া প্রতিষ্ঠান বন্ড জালিয়াতির তথ্য পায় সিআইডি। চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মিজানুর রহমান দীপু চাকলাদার ও হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার নামের দুই সহোদরের শুল্ক ফাঁকি ও চোরাকারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ওই সময় দীপুকে গ্রেপ্তার করে শুল্ক গোয়েন্দা। পরে মামলাটি সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। অপুর মালিকানাধীন মেসার্স চাকলাদার সার্ভিস এবং দীপুর মালিকানাধীন এমআর ট্রেডিংয়ের সঙ্গে কাস্টমস কমিশনারদের সখ্য ছিল। তাঁরা যেসব আমদানিকারকের নামে পণ্য আমদানি করেন তার বেশির ভাগই ভুয়া।
গ্রেপ্তার হওয়া মফিজুল ইসলাম লিটন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি অপু-দীপুর চোরাকারবার ও শুল্ক ফাঁকি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়,আওয়ামীলীগের মাফিয়া খ্যাত দীপু চাকলাদার এখন অত্মগোপনে থাকায় অপু চাকলাদার ভাইয়ের অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিএনপি দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে বিশেষ সুবিধা নিচ্ছে অপু চাকলাদার।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বড় ভাই হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার প্রতিবেদককে বলেন,আমি এখন দেশের বাড়িতে আছি ঢাকায় এসে সাক্ষাতে আপনার সাথে কথা বলব।
হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদরের ছোট ভাই মিজানুর রহমান দিপু চাকলাদারকে মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন দিলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এসসি//