শাপলা একটি অজরায়ুজ উদ্ভিদ অর্থাৎ এর কাণ্ড ও মূল পানিতে নিমজ্জিত থাকে। পাতাগুলো আংশিকভাবে নিমজ্জিত। এই উদ্ভিদ প্রায় ৩০০ খ্রিষ্টপূর্ব পুরোনো। সারা বিশ্বে প্রায় ৩৫ প্রজাতির শাপলা আছে। বাংলাদেশে তিন রঙের শাপলা পাওয়া যায়, যেমন—সাদা শাপলা, লাল শাপলা, নীল শাপলা। এর মধ্যে সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। শাপলা সাধারণত স্রোতবিহীন জলাশয়ে জন্মে। এর মূল জলাশয়ের নিচে কাদার মধ্যে ডুবে থাকে। জলাশয়ের পানি বাড়লে এর ডাঁটাও বাড়তে থাকে।
সাদা শাপলা মূলত এশিয়ার প্রজাতি। সাদা শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম: Nymphaea nouchali, এটি বাংলাদেশের জাতীয় ফুল।
বর্ষাকালে প্রায় সব জায়গায় খাল-বিল, পুকুরে শাপলা পাওয়া যায়। পানিতে থাকা শাপলার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে। আবার একইভাবে পানি থেকে তুলে শাপলা ফুলের লম্বা ডাঁটা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। গ্রামের মতো শহরেও শাপলা ডাঁটার জনপ্রিয়তা বেড়েছে তাই তুলনামূলক কম দামে বর্ষাকালে বাজারে পাওয়া যায় শাপলা ডাঁটা।
প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলার লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলো, ক্যালোরি-প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৬।
লাল রঙের শাপলা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শাপলার ফুল থেকে আলুর মতো বড় বড় ফল হয় যাকে স্থানীয় ভাষায় ড্যাপ বলে। এ ফল থেকে খই ও মোয়া তৈরি করা হয়। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় শাপলার ডাঁটা রাখা যায় যা পুষ্টিকর, তুলনামূলক সহজলভ্য ও কম দামি।
শাপলা ডাঁটায় থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান এবং ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। শাপলার ডাঁটায় আরও রয়েছে ভিটামিন সি। যা একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও শরীরের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এছাড়া শাপলাতে আছে গ্যালিক এসিড নামক এনজাইম, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
শাপলা ডাঁটাতে থাকা ভিটামিন বি১ শরীরের কার্বোহাইড্রেটকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। এটি গ্লুকোজ বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয়। শাপলা ডাঁটার পুষ্টি উপাদানগুলো ইনসুলিনের স্তর স্থিতিশীল রেখে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ভিটামিন বি৭ বা বায়োটিন একটি পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন। এটি শরীরের বিপাক এবং কার্যক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। শাপলা ডাঁটা থেকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এই বায়োটিন পাওয়া যায়। যা চুল ও নখের সৌন্দর্য বজায় রাখতেও ভূমিকা রাখে শাপলা ডাঁটা। নিয়মিত এ সবজি খেলে চুল হবে প্রাণবন্ত এবং মসৃণ। নিয়মিত শাপলা ডাঁটা খেলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। এটি ত্বকের কোষগুলোকে হাইড্রিয়েটিং এবং স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
শাপলা ডাঁটাতে রয়েছে একটি বিশেষ উপাদান ফ্লেভনল গ্লাইকোসাইট। এটি মাথার রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং মাথা ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে ও স্নায়ু, পেশী, হার্টের কার্যক্রমে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যকৃতের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে শাপলা ডাঁটা। এছাড়া অ্যাসিডিটি, রক্ত আমাশয়, চুলকানি ইত্যাদি প্রকৃতির রোগ প্রতিরোধ হয় শাপলা ডাঁটা খেলে। শাপলা ডাঁটাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ক্যালসিয়াম হাড়, দাঁত মজবুতসহ নানাবিধ কাজ করে থাকে।
এসসি//