সময়ের চাকা
ঢাকাTuesday , 12 November 2024
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আবহাওয়া
  7. কৃষি
  8. ক‍্যাম্পাস
  9. খেলা
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. ধর্ম
  13. বিনোদন
  14. রাজধানী
  15. রাজনীতি

মাকে হত্যা করে ডিপ ফ্রিজে রাখেন ছেলে,সাজান ডাকাতির নাটক

Link Copied!

বগুড়ায় এক নারীর মরদেহ নিজ বাড়ির ডিপ ফ্রিজ থেকে উদ্ধারের ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। আলোচিত সেই হত্যার রহস্য বের করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। একই সঙ্গে হত্যায় সরাসরি জড়িতকে আটক করা হয়েছে।

তবে ১০ নভেম্বরের ওই হত্যাকাণ্ডটিকে যতোটুকু লোমহর্ষক মনে করা হচ্ছিলো, কেস ডিটেক্টডের পর সেই নির্মমতা তার চেয়েও অনেক বেশি বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাটি জানায়, ডাকাত দল নয়, গৃহবধূ উন্মে সালমা খাতুনকে (৫০) হত্যা করে তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে। পরে ঘটনাটি ডাকাতি বলে চালিয়ে দিতে মরদেহ ডিপ ফ্রিজে রাখাসহ কিছু চিত্রনাট্য পরিবারের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল।

মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাবের বগুড়া ক্যাম্পে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. এহতেশামুল হক খান। 

আটক তরুণের নাম সাদ বিন আজিজুর রহমান (১৯)। তিনি তার বাবার পরিচালানাধীন একটি মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

নিহত উম্মে সালমা খাতুন দুপচাঁচিয়া ডিএস (দারুস সুন্নাহ) কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আজিজুর রহমানের স্ত্রী। আজিজুর রহমান স্থানীয় উপজেলা মসজিদের খতিব এবং ‘আজিজিয়া হজ কাফেলা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। সন্তানদের মধ্যে সাদ ছোট। তাকে নিয়ে আজিজুর দম্পতি দুপচাঁচিয়া উপজেলার সদরে জয়পুরপাড়া এলাকায় নিজেদের চার তলা বাড়ি ‘আজিজিয়া মঞ্জিল’-এর তৃতীয় তলায় থাকতেন। অন্য সন্তানরা ঢাকায় থাকেন।

কেন এই হত্যা

মেজর এহতেশামুল জানান, হাত খরচের টাকা নিয়ে সাদের সঙ্গে মায়ের ঝগড়া চলছিল। ওই বাড়ি থেকে প্রায়ই ৫০০ থেকে হাজার টাকা হারিয়ে যেতো। ঘটনার দিন হাত খরচের টাকা চেয়ে না পাওয়ায় সাদ তার মাকে হত্যা করে। পরে তা ডাকাতি বলে প্রচারের চেষ্টা করে।

হত্যার পরের সাদের চিত্রনাট্য

গত ১০ নভেম্বর ‘আজিজিয়া মঞ্জিলে’ খুন হন গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুন। হত্যার পর তার মরদেহ ডিপ ফ্রিজে রাখা হয়। ওই দিন দুপুর তিনটার দিকে সাদ বাড়িতে গিয়ে মাকে না পাওয়ার কথা বাবাসহ স্বজনদের জানায়। এরপর খোঁজের এক পর্যায়ে সে ডিপ ফ্রিজের ভেতরে তার মায়ের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর এই ঘটনা ডাকাতি বলে প্রতিষ্ঠিত করতে ঘরে রাখা স্টিলের আলমারিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটার চিহ্ন এবং তার নিচে কুড়াল পড়ে থাকার চিত্র পরিবারকে দেখায়। 

পুলিশের সন্দেহ

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তবে বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা কিংবা স্বর্ণালঙ্কার খোয়া না যাওয়ায়, এমনকি মৃতের কানে থাকা স্বর্ণের দুল অক্ষত থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়। ওই দিন রাতে সাদকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।

কীভাবে নরক নেমে এসেছিল ওই নারীর ওপর

মেজর এহতেশামুল জানান, নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের পর পরই তারা ছায়া তদন্ত শুরু করেন। সাদকে সন্দেহ হলে সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসেন। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সাদ হত্যার কথা স্বীকার করে।

সাদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ঘটনার দিন হাত খরচের টাকা চেয়ে না পেয়ে মায়ের সঙ্গে সাদের তর্ক হয়। এক পর্যায়ে সে নাস্তা না খেয়েই মাদ্রাসায় চলে যায়। বেলা ১১টার দিকে ক্লাসের বিরতি হলে সে মাদ্রাসা থেকে বের হয়। 

এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িতে ঢুকে তার মাকে কুমড়া কাটতে দেখে। তখন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পেছন থেকে মায়ের নাক ও মুখ চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে বটি দিয়ে সাদের আঙুল কেটে যায়। কিন্তু তার পরেও সে দুই হাত দিয়ে নাক ও মুখ চেপে শ্বাসরোধ মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ওড়না দিয়ে মরদেহের দুই হাত বেঁধে ডিপ ফ্রিজে রাখে। 

পরে ঘটনাটি ডাকাতি বলে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কুড়াল দিয়ে আলমারিতে কোপ দেয় এবং প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে আবার সে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে তার মাকে খুঁজে না পাওয়ার কথা ফোনে বাবাসহ স্বজনদের জানায়।

সাদকে দুপচাঁচিয়া থানায় হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান মেজর এহতেশামুল।

থানা পুলিশের বক্তব্য ও মামলা

দুপচাঁচিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ফরিদুল ইসলাম জানান, ওই গৃহবধূ হত্যায় এখনও মামলা হয়নি। তবে নিহতের বড় ছেলে বাদি হয়ে এজাহার করবেন বলে জানানো হয়েছে।

এসসি//