বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের পর তার অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আদালত এলাকায় হামলা ও ভাঙচুরের সময় রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন।
নিহত আইনজীবী হলেন সাইফুল ইসলাম। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার জালাল উদ্দিনের ছেলে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় হতাহত আট জনকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার শরীরে কোপের আঘাত আছে।’
চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, ‘নিহত সাইফুল ইসলাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণকে সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। সাড়ে ১২টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে তাকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তার অনুসারীরা। প্রিজনভ্যানের সামনে অনেকে মাটিতে শুয়ে পড়েন। পরে আদালত এলাকায় ভাঙচুর শুরু করেন তারা। পাশাপাশি আইনজীবীদের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। আড়াই ঘণ্টা পর বেলা ২টা ৫০ মিনিটের দিকে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিপেটা শুরু করে। পরপর কয়টি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান বিক্ষোভকারীরা। এরই মধ্যে পুলিশ প্রিজনভ্যানে করে নিয়ে যেতে চাইলে সেটির চাকার হাওয়া ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশের গাড়িতে করে চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে একটি মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনায় ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। এ ঘটনায় আইনজীবীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এখনও পরিস্থিতি উত্তপ্ত আছে। স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি আমরা।’
চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা বলেন,আদালতের মসজিদ, ভবন, আশপাশের স্থাপনা, আইনজীবীদের কক্ষ এবং গাড়ি ভাঙচুর করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের হামলায় এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান বলেন, ‘চিন্ময়ের ভক্তরা আদালত এলাকায় হামলা চালিয়েছেন। বারবার অনুরোধ করা হলেও সরে যাননি। পরে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।’
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘আদালত এলাকায় বিক্ষোভকারীদের হামলায় এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
গত ৩১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করে জামিনের আবেদন করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার এটি শুনানির কথা রয়েছে।”
এসসি//